শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

রামাজানের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট মাসায়িল (২)

 যেসব কারণে রামাজানে রোযা না রেখে অন্য সময় রাখা যায়

রোগের কারণে রোযা রাখার শক্তি না থাকলে অথবা রোযা রাখলে রোগ মারাত্নকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা হলে, রামাজানের রোযা না রাখা জায়িয। তবে সুস্থ হওয়ার পর সেই রোযা কাজা করে নেয়া ফরজ।
* গর্ভবতী মহিলার ব্যাপারে যদি এ আশংকা হয় যে, রোযা রাখলে তার জীবনের বা পেটের বাচ্চার ক্ষতি হবে, তাহলে তিনি তখন রোযা রাখবেন না। পরে কাজা করে নিবেন।
* শিশুকে স্তন্যদানকারিণী মহিলার রোযা রাখলে যদি বাচ্চা দুধ না পায় আর তাতে বাচ্চার কষ্ট হয়, তাহলে তিনি রোযা রাখবে না, পরে কাজা করে নিবেন।
* শরয়ী মুসাফির (৪৮ মাইল = ৭৭ কিলোমিটার প্রায় বা আরও বেশী ‍দুরত্বের সফরের উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগকারী অথবা উপরোক্ত দূরত্বে ১৫ দিনের কমের নিয়তে কোথাও অবস্থানকারী) ব্যক্তির জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে কষ্ট না হলে সফরের মধ্যেই রোযা রাখা উত্তম, আর কষ্ট হলে না রাখা উত্তম। অতঃপর পরে কাজা করে নেয়া ফরজ।
* রোযা রাখা অবস্থায় সফর শুরু করলে সে রোযা ভেঙ্গে ফেলা যাবে না। বরং তা পুরা করা জরুরী ।
* সফরে পানাহার করে বে-রোযা অবস্থায় নিজ বাড়ীতে এলে, দিনের বাকী অংশে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
* সফরে পানাহার না করা অবস্থায় সূর্য ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্বে নিজ বাড়ী এলে, নিয়ত করে সে দিনের রোযা রেখে দেয়া জরুরী।
* হায়িজ ও নিফাসরত অবস্থায় রোযা রাখা নাজায়িয। পরে সেই রোজা কাজা করে নেয়া ফরজ ।
* হায়িজ ও নিফাস যেদিন বন্ধ হয়, সেদিনের অবশিষ্ট সময় রোযাদারদের মতো উক্ত মহিলার পানাহার ও সহবাস বর্জন করে থাকা ওয়াজিব।
* রামাজান মাসে রোযা রাখার সুবিধার্থে ঔষধ খেয়ে হায়িজ বন্ধ রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর । তাই তা করা বিধেয় হবে না। এজন্য মহিলাগণ হায়িজ বন্ধের চেষ্টা না করে পরে কাজা করে নিবেন।
* রোগী, মুসাফির ও হায়িজ- নিফাসওয়ালী মহিলা-যাদের জন্য রোযা না রেখে খাওয়া-দাওয়ার অবকাশ আছে, তাদের উপরও রামাজানের ইজ্জত- ইহতিরাম রক্ষা করা জরুরী অর্থাৎ তারা মানুষের সামনে খোলামেলা পানাহার করবেন না। বরং গোপনে পানাহার করবেন এবং লোকজনের সামনে রোযাদারের মতোই থাকবেন।



যে ব্যক্তি রোযা না রেখে ফিদইয়া দিতে পারেন
যেসব লোক অতিরিক্ত বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে অপারগ কিংবা দীর্ঘকাল রোগ ভোগের দরুণ মারাত্নকভাবে দুর্বল হওয়ায় অথবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে একেবারে নিরাশ হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য রোযা না রেখে তার বদল ফিদইয়া (প্রতি রোযার বদলে পৌনে দু’সের তিন মাশা= ১৬৩৬ গ্রাম গম বা তার মূল্য গরীব-মিসকীনকে দেয়া অথবা একজন গরীব বা মিসকীনকে দু’বেলা খানা খাইয়ে) দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে পরবর্তীতে যদি রোযা রাখার ক্ষমতা লাভ হয়, তাহলে ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাজা করে নিতেই হবে-চাই ফিদইয়া দেয়া হয়ে থাকুন না কেন।
* যে ব্যক্তির উপর কাজা রোযা রয়ে গেছে এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা রাখেননি, সেসব রোযার ফিদাইয়া দেয়ার জন্য মৃত্যুর পূর্বে ওসীয়াত করা তার উপর ওযাজিব।
* সফর অথবা রোগের কারণে যে রোযা রাখা হয়নি, যদি সফর শেষ হওয়া বা সুস্থ হওয়ার পর তা কাজা করে নেয়ার অবকাশ লাভের পূর্বেই মৃত্যু এসে যায়, তাহলে রোযার ফিদইয়া দেয়ার জন্য ওসীয়ত করা জরুরী নয়। তবে ওয়ারিশগণ নিজেদের মাল থেকে তার ফিদইয়া আদায় করে দিলে উত্তম হবে।

সাহরীর মাসালিয়
* রোযাদারের জন্য সাহরী খাওয়া সুন্নাত। কোনো কারণে সাহরী না খেতে পারলে সাহরী খাওয়া ছাড়াই রোযার নিয়ত করবেন । এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।
* অর্ধ রাতের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পযর্ন্ত যো কোনো সময় সাহরী খাওয়া হলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে শেষ রাতে খাওয়াই উত্তম।
* খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সামান্য কিছু খেয়ে অথবা একটু পানি পান করে হলেও এ সুন্নাত আদায় করা বাঞ্ছনীয়। এতে বরকত লাভ হবে।

ইফতার
* সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই ইফতার করা সুন্নাত। সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে ইয়াকীন হয়ে যাওয়ার পর ‍বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ।
* খুরমা-খেজুর দ্বারা ইফতার করা উত্তম। অন্য কিছু দ্বারা করাতেও ক্ষতির কিছু নেই।
* ইফতারের সময় “বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বারাকাতিল্লাহ” বলে ইফতার শুরু করে ইফতারের পর এই পড়া সুন্নাত-

তারাবীহর মাসায়িল
* ২০ রাক‘আত তারাবীহর নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
* তারাবীহর জামা‘আত সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।
* নাবালেগ ছেলেকে (হাফেজ হোক বা না হোক) ইমাম বানানো জায়িয নয়। বালেগ ইমামের পিছনে নামায পড়তে হবে।
* যে ব্যক্তি পরে যোগ দেয়ার কিছু তারাবীহ রয়ে গেছে, তিনিও ইমামের সাথে তারাবীহ আদায় করবেন।
ই‘তিকাফের মাসায়িল
* রামাজানের শেষ দশদিন মহল্লার মসজিদে ই‘তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। মহল্লার কেউই যদি ই‘তিকাফ না করেন, তাহলে মহল্লার সকলেই গুনাহগার হবেন।
* মুজুরীর বিনিময়ে ই‘তিকাফ করা বা করানো কখনো জায়িয নয়। এতে ই‘তিকাফ আদায় হবে না। খালিস দিলে আল্লাহর সুন্তুষ্টির জন্য ই’তিকাফ করতে হবে। 

*** মাসিক আদর্শ নারী হতে সংগ্রহকৃত। 
*** সম্পাদনায়- R.Hossain