রামাজান শরীফে
রোযা রাখা ইসলাম পাঁচ স্তম্ভের একটি। এ রোযা
প্রত্যেক আকেল-বালেগ
মুসলমানেরে ওপর ফরজ। যে ব্যক্তি এই রোযা রাখাকে ফরজ মনে করবে না, সে কাফির হয়ে যাবে। আর যে ফরজ
মনে করেও রোযা রাখবে না, সে মস্ত বড় গুনাহগার ও ফাসিক গণ্য
হবে।
রামাজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হযরত সালমান
ফারসী (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- “রাসূলুল্লাহ (সা.) শা’বান মাসের শেষ দিন আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন, তিনি বললেন, হে মানবমন্ডলী! তোমাদের নিকট এক মহান ও বরকতময়
মাস সমাগতক। সে মাসে একটি রাত যা এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা’আলা এ মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরজ করে
দিয়েছেন এবং (তারাবীহ
ইত্যাদির জন্য) রাত জাগরণ করা ছাওয়াবের বিষয় করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি
এ মাসে একটি নফল আদায় করবে, সে অন্য একটি ফরজ আদায়ের ফজীলত লাভ করবে। অার যে
ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে অন্য একটি মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান ছাওয়াবের
অধিকারী হবে। এ মাস সবর বা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের
ছাওয়াব হচ্ছে জান্নাত। এ মাস সমবেদনা প্রকাশের মাস। এ মাসে যে
ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, তার সমস্ত গুনাহ মাপ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে এবং যাকে ইফতার করিয়েছে তার রোযার সমপরিমাণ ছাওয়াবের ভাগী হবে। অধিকিন্তু এতে রোযাদারের ছাওয়াব একটুও কমবেনা। (হযরত সালমান (রা.) বলেন)! অামাদের মধ্যে সকলের এ সামর্থ নেই যে, আমরা রোযাদারকে (ভালোরূপে) ইফতার করাতে পারি! রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা উক্ত ছাওয়াব সেই ব্যক্তিকেও দান করবেন, যে এক ঢোক দুধ বা একটি খেজুর বা একটু পানি
দ্বারা রোযাদারকে ইফতার করাবে। আর যে
ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পেট পুরে খাওয়াবে, আল্লাহপাক তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এমনভাবে পান করাবেন
যে, জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে পিপাসার্ত হবে না। এটি এমন এক
মাস, যার প্রথম
ভাগ রহমতের, দ্বিতীয়
ভাগ মাগফিরাতের আর তৃতীয় ভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। যে ব্যক্তি
এ মাসে তার দাস-দাসীর উপর থেকে কাজের বোঝা হালকা করে দিবে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।” (মিশকাত শরীফ, ১৭৪ পৃষ্টা)
রোযা জরুরী মাসায়িল
* প্রতি
রোযার জন্য নিয়ত করা ফরজ। রোযার নিয়ত ব্যতীত সারাদিন উপবাস রোযা হবে
না।
* নিয়ত
মানে মনের ইরাদা। এর জন্য মুখে উচ্চারণ জরুরী নয়। তবে মুখে
অর্থ উচ্চারণ করা ভালো বা মুস্তাহাব। মুখে উচ্চারণ করলে এভাবে বলবে- আগামীকাল রামাজানের রোযা রাখার নিয়ত করলাম।
* রামাজানের
রোযার নিয়ত রাত থেকে করে নেয়া উত্তম। রাত থেকে নিয়ত না
করে থাকলে, সূর্য
পশ্চিমে ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্বে (দিনে সাড়ে দশটার মধ্যে) করে নিলেও চলবে।
যেসব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাজা ওয়াজিব হয় তবে কাফফারা ওয়াজিব হয় না
* কানে
বা নাকে ঔষধ বা তেল ঢেলে দেয়া।
* ইচ্ছা
করে মুখ ভরে বমি করা।
* কুলি
করার সময় গলার ভিতর পানি চলে যাওয়া।
* স্ত্রী
স্পর্শ ইত্যাদি বীর্যপাত হওয়া।
* কোন
বস্তু গলধঃ হওয়া যা সাধারণত খাওয়া হয় না, যেমন-কাঠ, লোহা ইত্যাদি।
* আগরবাতি,
লোবান ইত্যাদি ধোঁয়া ইচ্ছা করে নাক অথবা গলায় প্রবেশ করানো।
* বিড়ি,
সিগারেট, হুক্কা পান করা।
* রোযার
কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেলার পর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছে করে পানাহার
করা।
* রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরী খেয়ে
ফেলা।
* সুর্য
অন্ত গেছে মনে ভেবে দিনে ইফতার করে ফেলা।
* পুরুষের
পায়খানার রাস্তা দিয়ে আর মহিলার সামনের বা পিছনের রাস্তা
দিয়ে তেল ইত্যাদি প্রবেশ করানো।
* গ্লিসারিন
স্টিক বা ঢুস নেয়।
* পুরুষের পায়খানা রাস্তা আর মহিলার সামনের
রাস্তায় পানি বা তেল ইত্যাদি ভিজা আঙ্গুল প্রবেশ করানো ।
এসব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়। তবে এসব শুধু
কাজা ওয়াজিব হয়, কাফফারা ওয়াজিব হয় না।
প্রকাশ থাকে যে, পায়খানা করার সময় কারো
মলদ্বারে বা ভিতরের গেজ বের হয়ে গেলে পানি খরচ করার পর কাপড় ইত্যাদি দ্বারা তা শুকিয়ে
নেয়ার পূর্বে দাঁড়াবেন না। কেননা, মলদ্বার
বা গেজ ভিজা অবস্থায় ভিতরে চেলে গেলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সেই রোযা কাজা
আদায় করতে হয়।
যে সব কারণে
রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাজা ও কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হয়
রামাজানের রোযা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করলে,
তা স্বাভাবিক সহবাস কিংবা লাওয়াতাত যাই হোক উভয়ের উপর কাজা ও কাফফারা উভয়টিই
ওয়াজিব হবে।
* রোযা রাখা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো
পানীয়, ঔষধ, খাদ্যদ্রব্য পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে।
* রোযার কাফফারা হচ্ছে-একাধারে ৬০টি রোযা
রাখা-মাঝখানে একদিনও বাদ যেতে পারবেন না। অন্যথায় পুনরায় নতুন করে ৬০টি রোযা রাখতে
হবে। এ রকম ৬০টি রোযা মাত্র রামাজানের একটি রোযার কাফফারা। এ ৬০টির পূর্বে কাজা
হিসেবে একটি রোযা রাখতে হবে। কাজা ও কাফফারা মিলে একদিনের রোযার জন্য মোট ৬১টি
রোযা রাখতে হবে। তবে কাফফারা রোযা রাখার মত শক্তি না থাকলে বিকল্প কাফফারা রোযা
হিসেবে ৬০ জন মিসকীনকে দু’বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াতে হবে।
যেসব কারণে
রোযা মাকরূহ হয়ে যায়
* বিনা প্রয়োজনে কোনো জিনিস চিবানো অথবা
তরকারী ইত্যাদির লবণ ও অন্যান্য উপাদানের স্বাদ যাচাই করা। কিন্তু তা গিললে রোযা
ভেঙ্গে যাবে।
* কয়লা, মাজন. টুথপেস্ট দ্বারা দাঁত
মাজা।
* গোসল ফরজ হওয়ার পর সারাদিন গোসল না করা
অবস্থায় থাকা।
* শিংগা নেয়া, রোগীকে দেয়ার জন্য বা
অন্যকোনো উদ্দেশ্যে নিজ শরীল থেকে রক্ত বের করা।
* কারো গীবত করা।
* ঝগড়া-ফাসাদ করা, গালি-গালাজ করা।
* সাহরী খাওয়ার সময় এত দেরী করা যে,
সন্দেহযুক্ত সময় এসে যায়।
* কুলি ও নাকে পানি দেয়ার সময় সতর্কতা
অবলম্বন না করা-যাতে পানি ভেতরে চলে যাওয়ার আশংকা হয়।
* মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা।
এসব কারণে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। এসব থেকে
দূরে থাকা কর্তব্য।
যেসব কারণে
রোযা ভঙ্গ হয় না এবং মাকরূহ ও হয় না
* মিসওয়াক করা।
* শরীরে তেল লাগানো ।
* চোখে ঔষধ বা সুরমা দেয়া।
* সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়া।
* রোযার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেলা।
* ধোঁয়া, ধুলা-বালি, মাছি ইত্যাদি
অনিচ্ছায় গলার ভিতরে চলে যাওয়া।
* কানে পানি প্রবেশ করা বা করানো।
* অনিচ্ছায় বমি হওয়া।
* স্বপ্নদোষ হওয়া।
* দাতঁ থেকে রক্ত বের হওয়া। তবে রক্ত
গলার ভিতরে চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
* রাতে গোসল ফরজ হয়ে গেলে সুবহে সাদিকের
পূর্বে গোসল না করা অবস্থায় রোযার নিয়ত করা।
এসব কারণে রোযার কোনো প্রকার ক্ষতি হয়
না। তাই এসবের কোনোটা হলে অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই।
***মাসিক আদর্শনারী হতে সংগ্রহকৃত।