রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

উপদেশমূলক গল্প :



(1) এক ব্যক্তি শব্দ মনে রাখতে পারতো না, তাই ভাল করে কথা বলতে পারতো না। সে অধিকাংশ কথা ইশারার মাধ্যমে বলতো। একদিন সে এগারশত টাকার বিনিময়ে একটি হরিণ কিনলো। হরিণ নিয়ে পথ ধরে বাড়ীতে যেতে লাগলো।
পথিমধ্যে এক ব্যক্তি হরিণের মূল্য জানতে চাইলো। সংখ্যার শব্দ তার মনে নেই, তাই মুখে বলতে পারলো না। তখন সে হরিণের রশি মুখে কামড়ে ধরে ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল এবং বাম হাতের পাঁচ আঙ্গুল উঁচা করে দেখালো। পাঁচে পাঁচে হলো দশ। বাকি রইলো এক। এরপর জিহ্বা বের করে এগার পূর্ণ করলো। কিন্তু সে যে-ই জিহ্বা বের করলো, এমনি হরিণ দৌড়ে পালালো।
উপদেশ: মানুষের ভাষাজ্ঞান আল্লাহ তা’য়ালার বিরাট নিয়ামত। কথা বলতে না পারা বড় মুসীবতের বিষয়। তাই যাদেরকে কথা বলার শক্তি দেয়া হয়েছে, তাদের এজন্য বারবার মহান আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, কোন কিছু করার আগে তার পরিমাণ চিন্তা করা উচিত। অন্যথায় অনাকাঙ্কিত পরিনতি সৃষ্টি হয়ে তা আফসোসেরই কারণ হতে পারে। [মাওয়ায়িজে হুকুম ও ফারয়িজ, পৃষ্ঠা: 746]

(2) দুইবন্ধু সফরে বেরুলো। একপর্যায়ে ক্লান্তি নেমে এলে তারা একটি মনযিলে অবস্থান করলো। এখানে তারা রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়ার কাজ সারবে।
তখন এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বললো, আমি কূপ থেকে পানি উঠাই, তুমি বন থেকে খড়ি নিয়ে এসো। দ্বিতীয় বন্ধু বললো, ভাই! আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তখন প্রথম বন্ধু একাই দুইটি কাজ করে বললো, তুমি মসলাপাতি রেডি করে দাও, আমি রান্না করবো।
দ্বিতীয় বন্ধু বললো, ভাই! এটাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাধ্য হয়ে প্রথম বন্ধু রান্না শেষ করলো। এরপর বললো, এবার এসো খেয়ে নাও। তখন দ্বিতীয় বন্ধু বললো, তোমার কতগুলো কথা অমান্য করেছি, আর কত অমান্য করবো! দাও, খেয়ে নিই।
উপদেশ: সমাজে একশ্রেণির মানুষ থাকে স্বার্থপর ও মতলববাজ। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই ভাবে। অপরের সুবিধা-অসুবিধার কথা তাদের মাথায় থাকে না। এদের সাথে লেনদেন করতে সাবধান থাকতে হবে। [মাওয়ায়িজে হুকুম ও ফারয়িজ, পৃষ্ঠা: 726]

(3) কোন এক যুক্তিবিদ্যার পন্ডিতকে কেউ মাসআলা জিজ্ঞেস করলো যে, কূপের মধ্যে কাঠবিড়ালী পড়েছে। এখন কূপ পাক করার জন্য কয় বালতি পানি উঠাতে হবে?
এই বেচারা স্রেফ যুক্তিবিদ্যা জানতেন, ইলমে ফিকাহ সম্পর্কে তার ধারণা ছিল না। এখন তিনি তার মূর্খতা ঢাকার জন্য বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে নিজের জ্ঞানের মিথ্যা বহর জাহির করতে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, কূপের মধ্যে যে কাঠবিড়ালী পড়েছে, এর দুই অবস্থা হতে পারে: নিজে পড়েছে অথবা অন্য কেউ ফেলেছে। যদি নিজে পড়ে থাকে, এরও দুই অবস্থা হতে পারে : দৌড়ে এসে পড়েছে অথবা ধীরে ধীরে পড়েছে। আর যদি অন্য কেউ ফেলে থাকে, এরও দুই অবস্থা হতে পারে : মানুষে ফেলেছে অথবা কোনো জীব-জানোয়ার ফেলেছে। বর্ণিত প্রতিটি অবস্থারই পৃথক পৃথক হুকুম রয়েছে। এখন আপনি বলুন, আপনার অবস্থা কোনটি?
যুক্তির পন্ডিতের মুখে এতসব অবস্থার কথা শুনে লোকটি হতভম্ব হয়ে গেলেন এবং তাকে খুব বিজ্ঞ মনে করলেন। এতসব প্রশ্নের তোড়ে হতচকিত হয়ে লোকটি বললেন, সেই কাঠবিড়ালীটি কিভাবে পড়েছে তাতো জানি না! পন্ডিত তখন বাহাদুরি জাহির করে বললেন, তাহলে আপনার মাসআলার কিভাবে জবাব দেব?
উপদেশ: উপরে বর্ণিত কূপে কাঠবিড়ালী পড়ার সকল অবস্থার একই হুকুম। এখানে কোনো পৃথক হুকুম নেই। তা যেভাবে পড়ুক বা যে-ই ফেলুক। কিন্তু এই পন্ডিত বেচারা তার মূর্খতা ঢাকার জন্য নানা অবস্থাভেদের সৃষ্টি করেছেন। এটা নিছকই কথা ফুলঝুড়ি।
কেউ কেউ আবার মাসআলা জিজ্ঞাসিত হয়ে না জানার কারণে ভুল জবাব দিয়ে থাকে। তারা ভাবে, একটা কিছু না বলে নীরব থাকলে মানুষ মূর্খ মনে করবে।
এরকম করা মোটেও উচিত নয়। এগুলো প্রতারণার নামান্তর এবং মানুষকে ভুল পথ পরিচালিত করার শামিল। যা মস্তবড় অপরাধ। [আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহু, পৃষ্ঠা: 40]

অনুবাদ : মাওলানা মুনীরুল ইসলাম
সম্পাদনায়: R.Hossain