আমরা রামাজানে রোযা রেখে সংযম পালন করি, কিন্তু ওদিকে এই একমাস ব্যতীত
লাগতার ১১টি মাস আমরা শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদের কর্তব্যকে ভুলে থাকি এবং মনের
মাঝে আল্লাহর স্মরণ ভুলে শয়তানকে স্থান দেই। তাই একমাসে মানবরূপী এই ইঞ্জিলটিকে
পরিচালনার জন্য ডিজেল ভরে বাকী ১১মাস চলার উপায় করে নিতে হবে। যদি আমরা বাকী ১১মাস
নিজের মন পরিচালিত দেহটাকে সঠিক রাস্তায় চালাতে চাই, তাহলে এই রামাজানের মাসে
আমাদের উচিৎ হবে আত্মশুদ্ধিমূলক কয়েকটি আমল অতি গুরুত্ব সহকারে পালন করা ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান, “রোযা
ঢালস্বরূপ-যতক্ষন একে ফেড়ে না ফেলা হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭১) ঢাল হবার
অর্থ হল, মানুষ যেভাবে ঢাল দ্বারা নিজেকে হিফাজত করে, ঠিক তেমনি রোযার দ্বারাও নিজের
দুশমন অর্থ্যাৎ শয়তান হতে আত্মরক্ষা করে। এক বর্ণনায় আছে, রোযা আল্লাহর আজাব হতে
রক্ষার ঢাল । অপর বর্ণনায় আছে, রোযা জাহান্নাম হতে মক্তির ঢাল।
জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, “রোযা কোন
জিনিসের দ্বারা ফেড়ে যায়?” রাসূল্লাহ (সা.) বললেন, “ মিথ্যা ও গীবতের দ্বারা। ”
অপর হাদীসে রাসূল্লাহ (সা.) বলেন, “যে
ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করলো না, তার (রোযা রেখে) খানাপিনা
পরিত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। ” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭০)
তাই রোযা অবস্থায় সকল নাজাযিয ও গুনাহর কাজ
পরিত্যাগ করতে হবে। আর রোযার মাধ্যমে মুজাহাদা করে সারা বছর এভাবে অন্যায় থেকে
বেঁচে থাকার যোগ্যতা অজর্ন করতে হবে। আর এর নামই হচ্ছে তাক্বওয়া- যা রোযার একটি
অন্যতম সুফল।
মিথ্যা বলা, সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, চুরি করা,
দুর্নীতি করা ইত্যাদি সব অন্যায় কর্ম বর্জনের দীক্ষা লাভ করতে হবে মাহে রামাজানে।
পাশাপাশি কারো সাথে ঝগড়া করা, গালাগালি করা ও গীবত করা রোযা অবস্থায় কঠোরভাবে
নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি যদি কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে, তখন তাকে বলতে হবে- আমি
রোযাদার।
আরেকটা সুক্ষ্ম গুনাহর বিষয় যা মানুষ স্বভাবতঃ
ভাবেই না, তা হল- কারো প্রতি খারাপ ধারনা পোষন করা। এটা মারাত্মক গুনাহের কাজ।
পবিত্র কুরআনের সূরাহ হুজুরাতের ৩২নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- “তোমরা
অধিকাংশ ধারনা করা বর্জন করো । নিশ্চয় কতেক ধারণা গুনাহ। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাদে নিন্দা না করা। তোমাদের কেউ কি
তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। সুতরাং
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।”
আমরা রোযা রেখে আজেবাজে কথাবার্তায় সময় কাটিয়ে
দেই। এটা অনুচিত। রোযাদারের সময়তো ইবাদত ও জিকির-ফিকির কাটবে। খাঁটি মুমিনগণ
বেহুদা ও অহেতুক কথাবার্তায় সময় নষ্ট করতে পারেন । এ সম্পর্কে পথ নির্দেশ করে
আল্লাহ তা’আলা সূরাহ মুমিনূনের ৩ নং আয়াতে সফলকামী মুমিনদের গুনাবলীর বণর্না
প্রসঙ্গে বলেন, “যারা অনথর্ক কথা-বার্তায় নিলিপ্ত। ”
তাই রোযাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য
উলামা-মাশায়িখগণ রোযার ৬টি আদব লেখেছেন-যা আত্মশুদ্ধিমূলক এবং রোযদার ব্যক্তির
জন্য এগুলো পালন করা জরুরী। সেগুলো হলো-
১। দৃষ্টির হিফাজত করা। কারণ, কুদৃষ্টি দ্বারা
যিনার গুনাহ হয়। তাই কুরআন ও হাদীসে দৃষ্টি অবনত রাখার কথা কঠোরভাবে উল্লেখ করা
হয়েছে। এ জন্য রামাজান মাসে আমাদের কর্তব্য হলো-নিজেদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা
এবং কুদৃষ্টি থেকে দূরে থাকা।
২। বানের
হিফাজত করা। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার জবান ও হাত
থেকে অন্য মুসলান নিরাপদ থাকে। ”
৩।
কানের হিফাজত করা। কানকে সবসময় কুরুচিপুর্ণ কথা বা গান কিংবা অশ্লীল কথাবার্তা
শুনা থেকে বিরত রাখতে হবে ।
৪।
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হিফাজত করা। অর্থ্যাৎ কোনক্রমেই যাতে নিজের কোন অঙ্গের
দ্বারা কোন ধরনের খারাপ কাজ সংঘটিত না হয়।
৫।
হালাল মাল দ্বারা সাহরী ও ইফতার করা। আর এতে এত বেশী না খাওয়া যা দ্বারা শরীর ভারি
হয়ে রোযার কৃচ্ছ্বতা ও সংযমের কথা মন থেকে দূরে সরে যায় এবং ইবাদতে অলসতা আসে।
৬।
রোযাদার রোযা রেখে এই ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে যে, না জানি রোযা কবুল হচ্ছে কি না। আর
এর কবূলিয়্যতের জন্য মহান আল্লাহ নিকট রোনাজারির সাথে অনূনয়-বিনয় করে দু’আ করতে
থাকবে ।
এভাবে মাহে রামাজানের রোযার মাহাত্ন্য ও হক
বজায় বাখবে। বস্তুত রামাজানের মাস হলো আত্নশুদ্ধির অর্জনের মাস। তাই আত্মশুদ্ধির
এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে পরিশুদ্ধ নেক জীবন
লাভ করতে হবে।
লিখক-জুনাইদ
আল কাকাইলছেওয়ী
সম্পাদনায়- R.Hossain