মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০১৫

রামাজান ও রোযার মাহাত্ন্য


মাহে রামাজানের গুরুত্ব ও মাহাত্ন্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-“রামাজান মাস সেই মাস-যে মাসে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য ‍হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে রোযার গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। যাতে তোমরা রোযার গণনা পূরণ কর এবং তোমরা যেন আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর এ জন্য যে, তিনি তোমাদের কে হিদায়াত দান করেছেন এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” (সূরাহ বাকারা, আয়াত নং 185 )
রামাজান চান্দ্র বছরের নবম মাস। এটা বছরের শ্রেষ্টতম মাস, সংযমের মাস। এটা কৃচ্ছ্ব সাধনা, ইবাদত ও রোনাজারির মাধ্যমে আল্লাহর দরবার হতে রহমত, বরকত ও  মাগফিরাত হাসিল করার মাস। 
এ মাসকে কেন শ্রেষ্টতম বলা হয়েছে? তার কারণ হিসেবে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো পাওয়া যায়-





১. কুরআন নাযিলের মাস:
মানবজাতির জীবন বিধান পবিত্র কুরআন এ মাসের লাইলাতুল কদর রজনীতে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সম্পর্কে সূরাহ কদরে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই আমি কুরআন মাজীদকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। ”
২. তাকওয়া ও প্রশিক্ষণের মাস:
ইসলামী জিন্দেগীর ৪র্থ ভিত্তি সওম বা রোযা পালনের জন্য এ মাসকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। রোযার মাধ্যমে বান্দা অধিকতর তাকওয়া ও পরহেজগারী হাসিল করেতে সক্ষম হয়। এ দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হল, যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বকারী হতে পারো।” (সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং 185)
অার অধিক তাকওয়াধারী ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানী হয়। যেমন, পবিত্র কুরঅানে ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী সে-ই অধিক মুত্তাকী।” (আল-কুরআন)
. লাইলাতুল কদরের মাস:
বছরের রাতসমূহের মধ্যে যে রাতটি সবচেয়ে মূল্যবান, তা হচ্ছে-লাইলাতুল কদর। এ একটি রাতের ফজীলত এক হাজার রাতের চেয়েও বেশী। এ সম্পর্কে সূরাহ কদরে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-“লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।”
. তারাবীহ নামাযের মাস:
পবিত্র রামাজানের সম্মানেই আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য তারাবীহ নামাযের হাদিয়া দিয়েছেন। এর ফজীলত প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে রামাজানের তারাবীহ পড়বে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হবে ।”
৫. আমলের সাওয়াব বৃদ্ধির মাস:
বাইহাকী শরীফে বর্নিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “এ মাসে একটি ফরজ ইবাদতের ফজীলত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমতুল্য। আর এ মাসের একটি নফল ইবাদতের মূল্য অন্য মাসের একটি ফরজের সমান।”
৬. রহমত, মাগফিরাতের ও নাজাতের মাস:
বাইহাকী শরীফের এক হাদীসে পবিত্র রামাজানের প্রথামাংশকে রহমত, দ্বিতীয়াংশকে মাগফিরাত এবং তৃতীয়াংশকে দোজখ হতে মু্ক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা এ মাসের বিশেষত্ব।
৭. বেহেশতের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়: মাহে রামাজানে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে তিরমিযী শরীফের এক হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
তেমনি বেহেশতের আটটি দ্বার আছে, তন্মধ্যে একটি বিশেষ দ্বারের নাম রাইয়ান। তার মধ্যে রোযাদারগণ ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
৮. রোযা আল্লাহ তা’আলার খাস ইবাদত:
আদম সন্তানের সৎকাজের ছাওয়াব দশ হতে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়, কিন্তু রোযার নেকী সীমাবদ্ধ নয়। যেহেতু রোযাদার আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের কামনা- বাসনা ও আহার্য পরিত্যাগ করে, এ জন্য এর ছওয়াব আল্লাহ তা’আলা নিজে দিবেন বলে হাদীসে কুদসীতে ঘোষণা করেছেন।
৯. শয়তান শিকলাবদ্ধ করা হয়ে এবং রিপু দমন করা হয়:
রোযা রাখলে দেহের রস শুষ্ক হয়ে যায়, এতে কামশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয় এবং শয়তানের গতি রোধ করা হয়। এ পর্যায়ে রামাজানে শয়তানদেরকে ‍শিকললাবদ্ধ করা হয় বলে হাদীসে রয়েছে ।
সমগ্র মুসলিমবিশ্ব বিপুল উৎসাহ- উদ্দীপনা ও আন্তরিকতার সহিত রামাজানের রোযা আদায়ের মাধ্যমে আধ্যাত্নিক জগতের উচ্চ মকামে আরোহন করে। রামাজানে আল্লাহর মহব্বত-ভালোবাসা ও সান্নিধ্য লাভের স্পৃহা প্রবল হয় এবং এ আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরনা প্রতিটি মুসলিম অন্তরাত্নাকে আকর্ষণ ও আন্দোলিত করতে থাকে।

লিখক: মুহাম্মদ আবদুল আজিজ
সম্পাদনায়- R.Hossain