আমাদের এই সুন্দর প্রথিবীতে রয়েছে অনেক ধরণের সুন্দর প্রাণীর সমাহার। এদের মধ্যে কোন প্রাণীর রয়েছে সুন্দর দৈহিক গঠন। অনেক প্রাণী বয়ে বেড়ায় চোখ ধাঁধানো রং নিয়ে। আবার কিছু
প্রাণী আছে, যারা সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ। এইসব সুন্দর প্রাণীর কাহিনী নিয়েই আজকের পোষ্ট।
(বেগুনি কাঁকড়া)
বেগুনি কাঁকড়াঃ কাঁকড়াদের গায়ের রং এমনিতে কালচে খয়েরি হয়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে লাল রংয়ের
কাঁকড়াদেরও। কিন্তু বেগুনি রংয়ের কাঁকড়া? ২০১২ সালে এমনই এক জাতের বেগুনি
কাঁকড়ার সন্ধান মিলেছে ফিলিপাইনে। খুঁজে বের করেছেন জার্মান বিজ্ঞানী
হেন্ড্রিক ফ্রেইট্যাগ। বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইনসুলেমন পালাওয়ানেনসি’। এই
কাঁকড়াদের শরীরে হালকা বেগুনি এবং কমলা রংয়ের অদ্ভুত মিশেল দেখা যায়। চওড়ায়
এরা হয় মোটামুটি এক থেকে দুই ইঞ্চি। ফিলিপাইনের পালাওয়ান দ্বীপেই শুধু
দেখা পাওয়া যায় এদের। বিজ্ঞানীদের ধারণা, দ্বীপের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ
খাওয়ানোর কারণে সাধারণ প্রজাতির কাঁকড়ারাই বিবর্তনের মাধ্যমে বেগুনি রংয়ের
হয়ে গেছে। আর তার ফলে তারা যে আরও সুন্দর হয়েছে, তা আর বলতে!
(রত্ন শুঁয়াপোকা)
রত্ন শুঁয়াপোকাঃ শুঁয়াপোকার নাম শুনলে অনেকেরই গা ঘিনঘিন করে ওঠে। এত্ন্নে শুঁয়াপোকা দেখলে
তারাও মুগ্ধ হয়ে যাবে, এমন সুন্দর এই শুঁয়াপোকারা। রত্নের মতো চকচকে এই
শুঁয়াপোকাদের বাস মধ্য আমেরিকায় আর দক্ষিণ আমেরিকায়। মূলত এক ধরনের মথ
‘আকরাগা কোয়া’র জন্মের পূর্ব অবস্থা হল রত্ন শুঁয়াপোকা। আকারেও এরা খুবই
ছোট্ট; বিজ্ঞানীরা জানান, এরা মানুষের হাতের বুড়ো আঙুলের নখের চাইতে বড় হয়
না। এমনিতে শুঁয়াপোকাদের সবচাইতে বড় শত্রু হল পাখি। পাখিদের হাত থেকে
বাঁচতে কোনো কোনো শুঁয়াপোকার শরীরে থাকে বিষাক্ত কাঁটা। কিন্তু রত্ন
শুঁয়াপোকার ক্ষেত্রে অদ্ভুত ব্যাপার হল, এরা দেখতে ব্যাপক আকর্ষণীয় হলেও
পাখি কিংবা পিঁপড়া এদের এড়িয়ে চলে। কারণ, এদের শরীরের আঠালো ভাব। মারাত্মক
আঠালো ধরনের এক পদার্থ দিয়ে ঘেরা থাকে রত্ন শুঁয়াপোকার জেলির মতো স্বচ্ছ
দেহ। আর এই আঠার কবলে পড়ে ঝামেলায় জড়াতে চায় না এদের শিকারিরাও।
(ময়ূর মাকড়সা)
ময়ূর মাকড়সাঃ উজ্জ্বল রংয়ের ছোট্ট এই ময়ূর মাকড়সাদের ইংরেজিতে বলা হয় ‘পিকক স্পাইডার’।
একজন মানুষের বুড়ো আঙুলের নখের সমান এদের আয়তন। কাজেই ওদের ভয় পাওয়ারও
কিছুই নেই। এমনিতে বেশির ভাগ প্রাণীর গায়ের রংয়ের উজ্জ্বলতা প্রকাশ করে এক
ধরনের সতর্কবাণী, যেন শিকারিরা দূরে থাকে। কিন্তু ময়ূর মাকড়সার ক্ষেত্রে
ব্যাপারটা ভিন্ন। এদের গায়ে উজ্জ্বল রং থাকে নারী মাকড়সাদের আকৃষ্ট করার
জন্য। সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করার জন্য এরা কী না করে! রঙিন গায়ে নেচেও বেড়ায়।
হ্যাঁ, প্রজননের সময় নারী মাকড়সাকে খুশি করার জন্য নাচতে হয় পুরুষ ময়ূর
মাকড়সাদের! চমৎকার এই প্রাণীটির দেখে মেলে শুধু অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে।
কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের বনে এই খুদে মাকড়সাদের পাওয়া যায়।
কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়া ভারি কঠিন। কারণ লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রুত জায়গা বদল
করে এরা।
(কলা শামুক)
কলা শামুকঃ নাম দেখেই আঁৎকে উঠবে অনেকে। কলা শামুক আবার কী! এই শামুকরা দেখতে একদম
পাকা কলার মতো হলদে রংয়ের বলেই নাম হয়েছে কলা শামুক। প্রায় ৯.৮ ইঞ্চি লম্বা
এই শামুকরা ডাঙার শামুকদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতি। আর সব শামুকের
মতোই এদের থাকে চারটি করে শুঁড়। মাথার উপরের দুটি শুঁড় দিয়ে এরা আলো
বাতাসের ধরন বুঝতে পারে। আর নিচের দুটি শুঁড় দিয়ে এরা পরীক্ষা করে রাসায়নিক
পদার্থ। কলা শামুক কিংবা ‘ব্যানানা স্লাগ’ এর বাড়ি উত্তর আমেরিকায়।
প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে শুরু করে আলাস্কা, এমনকি ক্যালিফোর্নিয়াতেও
দেখা পাওয়া যায় এদের। প্রতি মিনিটে সাড়ে ৬ ইঞ্চি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে
এরা।
(সোনালি গুবরেপোকা)
সোনালি গুবরেপোকাঃ গুবরেপোকারা এমনিতেই খুব সুন্দর হয়, অনেকেই জানে। আর যদি এদের রং হয় ঝলমলে
সোনালি, তাহলে এই সৌন্দর্য যেন আরেকটু বেড়েই যায়! ‘গোল্ডেন টরটয়েজ বিটল’
এমনই ঝলমলে গুবরেপোকা। মাত্র ৮ মিলিমিটার দীর্ঘ সোনালি গুবরেপোকার বাস
উত্তর আমেরিকায়। ঘুরে বেড়ায় মিষ্টি আলু আর মর্নিং গ্লোরি ফুলের গাছে। তবে
রেগে গেলে ওরা দ্রুত রং বদলাতে থাকে। রং বদলিয়ে কখনও হয় সবুজাভ সোনালি,
কখনও বাদামি সোনালি, আবার কখনও বেগুনি সোনালি। এদের রং বদলানোর দ্রুততা
দেখে মনে হবে যেন কোনো বাতি জ্বলছে আর নিভছে! আর সোনালি পাখা নিয়ে যখন এরা
উড়ে বেড়ায়, মনে হয় যেন ‘হ্যারি পটার’ সিনেমার কিডিচ খেলা চলছে। অনেকেই এদের
চমৎকার রংয়ের জন্য এদের পোষ মানানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আটকা থাকলে ওরা
গায়ের উজ্জ্বল রং পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
(কাচ শামুক)
কাচ শামুকঃ আমেরিকার বাসিন্দা ‘স্পান গ্লাস স্লাগ’কে দেখলে কাচের টুকরো বলে ভুল হতেই
পারে। তবে আরও বিস্ময়কর একটি ব্যাপার হল, এদের যদিও শামুক বলা হয়, এরা
কিন্তু আসলে এক ধরনের শুঁয়াপোকা। শুঁয়াপোকা হলেও ওদের নাম শামুক কেন? কারণ
ওরা শামুকের মতোই অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাফেরা করে। শুঁয়াপোকার জীবন শেষে ওরা
মথের আকার ধারণ করে। দৈর্ঘ্যে এই শামুক নামের শুঁয়াপোকারা হয় ১৯ থেকে ২৪
ইঞ্চির মতো। আর বাস করে মূলত আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে কলোরাডো থেকে টেক্সাস
পর্যন্ত। তবে সুন্দর হলেও এই প্রাণীদের কাছাকাছি যাওয়া কিন্তু নিরাপদ নয়।
এদের শরীরের উপর এক রকম কাঁটা থাকে। এই কাঁটাগুলো কিন্তু বেশ বিষাক্ত।
(পাতা পোকা)
পাতা পোকাঃ হালকা সবুজ রংয়ের পাতা পোকা কিন্তু অনেকেরই চেনা। কচি পাতার মাঝে এরা এমন
ভাবে লুকিয়ে থাকে, খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায়ই থাকে না। এদের ইংরেজি নাম ‘লিফ
ইনসেক্ট’। অনেকে আবার বলেন ‘ওয়াকিং লিফ’, হেঁটে বেড়ানো পাতা। দক্ষিণ পূর্ব
এশিয়া থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এদের বসতি।
পাতা পোকারা আকারে হয় সাধারণ একটি পাতার সমান। তবে সবচেয়ে মজা হয় যখন ওরা
হাঁটে। ওরা এমনভাবে হাঁটে, দেখে মনে হয় গাছের পাতা উড়ে যাচ্ছে!
(লাল মখমল পিঁপড়া)
লাল মখমল পিঁপড়াঃ এই পিঁপড়ার মতো দেখতে প্রাণীর বিশেষত্ব হল, গায়ের লাল রংয়ের মখমলের মতো
আবরণ। তবে দেখতে পিঁপড়া হলেও, এরা মূলত এক ধরনের বোলতা। কিন্তু বোলতা হলেও
তাদের পাখা নেই। আর এই পাখা না থাকায় এদের বোলতার মর্যাদা দেওয়া হয়নি, বলা
হয় পিঁপড়া। দেখতে খুবই সুন্দর হলেও, এরা কিন্তু মারাত্মক বিষাক্তও বটে।
বিজ্ঞানিদের মতে, লাল মখমল পিঁপড়ার হুলের বিষ এতটাই শক্তিশালী, তা দিয়ে
একটি আস্ত গরুকেও মেরে ফেলা সম্ভব। তাই অনেকে এদের ‘কাউ কিলার’ বা ‘গো
হত্যাকারী’ও বলে থাকেন। তিন থেকে চার ইঞ্চি লম্বা এই প্রাণীদের দেখা পাওয়া
যায় সারাবিশ্বে। বিশেষ করে শুকনো এবং বালুকাময় অঞ্চলে।
(লাঠিপোকা)
লাঠিপোকাঃ একদম লাঠির মতো দেখতে এই পোকাদের হঠাৎ দেখলে কোনো গাছের ডাল বলেই মনে হয়।
আর তাই অনেকেই এদের বলেন ‘হেঁটে বেড়ানো লাঠি’! ‘স্টিক ইনসেক্ট’ কিংবা লাঠি
পোকারা দৈর্ঘ্যে প্রায় এক থেকে বার ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। প্রজাতি
অনুসারে এদের দৈর্ঘ্য বদলায়। দক্ষিণ গোলার্ধ জুড়ে, অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকা
থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার প্রজাতির লাঠিপোকার
দেখা মেলে। আমাদের বাংলাদেশেও পাওয়া যায় লাঠিপোকা। এদের সবচেয়ে মজার
বৈশিষ্ট্য হল, কোনো অঙ্গহানি ঘটলে সেটা আবারও তৈরি করে নিতে পারে ওরা। কিছু
জাতের লাঠিপোকা আবার শত্রুর দিকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছুঁড়ে মারে।
ঠিক মতো তাক করতে পারলে এর ফলাফল হয় ভয়াবহ। শিকারিরা একেবারে অন্ধই হয়ে
যায়!
লেখকঃ জেনিফার ডি প্যারিস।