বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ
মুন্সি আব্দুর রউফের জন্ম
৮ই মে ১৯৪৩,
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে। পিতা মুন্সি মেহেদি হাসান ছিলেন
স্থানীয় মসজিদের ঈমাম। মার
নাম মকিদুন্নেসা।
আব্দুর রউফকে ভর্তি করিয়ে
দেওয়া হয় গ্রামের স্কুলে। সংসারের চিন্তায় একদিন হঠাৎই বাবা
ইন্তেকাল করেন। মা
অন্যের ফরমায়েশে কাঁথা সেলাই
এবং শিকা তৈরির
কাজ করে সংসার
চালাতে থাকলেন। অভাবী মা
মেয়ের বিয়েতে নতুন শাড়ির
বন্দোবস্ত করতে পারলেন না। মেয়েকে পুরোনো কাপড়েই বিদায় দিলেন
অচলে কান্না লুকিয়ে। মায়ের দুঃখ
বুঝলেন মুন্সি আব্দুর রউফ, বললেন
'' আমি বড় হয়ে
যখন আয় করবো
তখন অনেক নতুন
শাড়ি কিনে দেব
বুবুকে।''
সংসারের অভাব দেখে মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৬৩
সালের ৮ই মে
২০ বছর বয়সে
যোগদান করলেন ইপিআর-এ। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ পেলেন
পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে। তার ইপিআর
নম্বর -১৩১৮৭।
মায়ের
কাছে নিয়মিত চিঠি লিখতেন তিনি। প্রতিমাসে টাকা পাঠাতেন মায়ের কাছে। ১৯৭১
সাল। দেশের উত্তাল পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে জারী হয়েছে বিশেষ
সতর্কতা। সবার ছুটি
বন্ধ। মুন্সি আব্দুর রউফ চিঠি
লিখেন মায়ের কাছে,
দেশের অবস্থা ভালো হলে
লম্বা ছুটি নিয়ে
দেশে যাবেন। এর মধ্যেই ছোট বোনের বিয়ে
ঠিক করতে বললেন। কথা দেন বিয়েতে নতুন শাড়িসহ উপস্থিত থাকবেন অবশ্যই। মাকে দেওয়া
তার কথা রাখা
হয়নি।
মার্চ
১৯৭১, আব্দুর রউফ ইপিআর
এর ১১নং উইং
চট্টগ্রামে কর্মরত। এমন সময়
এলো ২৫ মার্চ
কালরাত। পাকিস্তানী সৈন্যরা সারা দেশে
চলাল ব্যাপক গণহত্যা। চট্টগ্রাম ইপিআর-এর
বাঙ্গালি সদস্যদের পূর্ব সচেতনতা এবং সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে তারা
রুখে দাড়ায় শত্রুর বিরুদ্ধে। রাতেই তারা
পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। যোগ
দেন ৮ ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে।
ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ৮ ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর-এর ১৫০
জন সৈনিকের দায়িত্বে দেওয়া হয়
রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌ পথে
নিরাপত্তাবুহ্য তৈরির। এই দলের
এক নম্বর এলএমজি চালক মুন্সি আব্দুর রউফ ছিলেন
পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলাধীন বাকছড়ির একটি বাঙ্কারে।
৮
এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২ নং
কমান্ডো ব্যাটেলিয়ানের দুই কোম্পানি সৈনিক ৭ টি
স্পিড বোট ও
২ টি লঞ্চ
সহযোগে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌপথের আশেপাশে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ করে। লঞ্চগুলোতে ৬ টি
৩" মর্টার সজ্জিত ছিলো। পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থান টের পাওয়া
মাত্রই তাদের অবস্থানের উপর ৩" মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। তাদের
এই অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
এই সুযোগে কিছু পাকিস্তানী সৈন্য পাড়ে নেমে
মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে।
ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান পেছনে হটার
সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নিরাপদে অবস্থান ত্যাগের জন্য দরকার
নিরবিচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মুন্সি আব্দুর রউফ এর
এলএমজির কাভারিং ফায়ারে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তার সৈন্যদের নিয়ে পেছনে হটতে
থকেন। তার অব্যর্থ গুলিতে স্পিড বোটগুলো ডুবে যায় এবং
সেগুলোতে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যরা হতাহত হয়।
বাকি সৈন্যরা লঞ্চ দুটিতে করে পালাতে থাকে।
পাকিস্তানীরা এলএমজির রেঞ্জের বাইরে গিয়ে
৩" মর্টারের গোলাবর্ষন করতে থাকে।
অসীম সাহসী মুন্সি আব্দুর রউফ তখনো
গুলি চালানো অব্যাহত রেখেছিলেন। হঠাৎ করে
শত্রুর একটি গোলা
তার ঠিক উপরে
পড়ে। মুহূর্তই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়
বাংলার অসীম সাহসী
বীর মুন্সি আব্দুর রউফ এর
দেহ।
পরবর্তীতে সহযোদ্ধারা তার লাশ
উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খাল সংলগ্ন টিলার উপরে সমাহিত করে। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান
বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।
বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে
সিপাহী মুন্সি আব্দুর রউফকে অনারারি ল্যান্স নায়েক পদে
মরোণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ তার জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে গেছেন তার প্রায় ১৫০ জন সহযোদ্ধার জীবন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্ম ১৯৩৫ সালের জুন মাসের কোনো এক বর্ষণমুখর রাতে নোয়াখালীর বাঘচাপড়া গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আজহার পাটোয়ারি ছিলেন মোটামুটি স্বচ্ছল গৃহস্থ এবং মাতা জোলেখা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
ছোটবেলায় তার পড়াশোনা শুরু হয়
পাড়ার মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে, পরে বাঘচাপড়া প্রাইমারি স্কুলে। স্কুল পাশ
করে ভর্তি হন
আমিষা পাড়া হাইস্কুলে। এসময় তার পিতার
আর্থিক স্বচ্ছলতা কমতে থাকে।
রুহুল আমিনকে এবার জীবিকা নিয়ে ভাবতে হয়।
হাইস্কুল পাশ করে
১৯৫৩ সালে তিনি
নৌ বাহিনীতে জুনিয়ার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন
এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য গমন
করেন করাচীর অদূরে মানোরা দ্বীপে পি. এন.
এস. কারসাজ-এ (নৌ
বাহিনীর কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)। ১৯৫৮
সালে তিনি সফলভাবে পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং
১৯৬৫ সালে মেকানিশিয়ান কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। সফলভাবে কোর্স সমাপনান্তে তিনি ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮
সালে তিনি পি.
এন. এস. বখতিয়ার নৌ-ঘাটি, চট্টগ্রামে বদলি হন।
১৯৭১
সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে
তিনি পরিবারের মায়া ছেড়ে
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার
সিদ্ধান্ত নেন এবং
এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২নং
সেক্টরে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি বহু
সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এ বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে সকল সেক্টর থেকে প্রাক্তন নৌসেনাদের আগরতলায় সংগঠিত করে নৌ
বাহিনীর প্রাথমিক কাঠামো গঠন করা
হয়। পরে তাদের
কোলকাতায় আনা হয়।
সেখানে সবার সাথে
রুহুল আমিনও ছিলেন।
ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে দুইটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কোলকাতার গার্ডেনরীচ নৌ ওয়ার্কসপে দুইটি বাফার গান ও মাইন পড লাগিয়ে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় 'পদ্মা' ও 'পলাশ'। রুহুল আমিন নিয়োগ পান 'পলাশের' ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। ৬ই ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পাকিস্তানী নৌ ঘাটি পি. এন. এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে 'পদ্মা', 'পলাশ' ও মিত্র বাহিনীর গানবোট 'পানভেল' ভারতের হলদিয়া নৌ ঘাটি থেকে রওনা হয়। ৮ই ডিসেম্বর সুন্দরবনের আড়াই বানকিতে বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট 'চিত্রাঙ্গদা' তাদের বহরে যোগ দেয়। ৯ই ডিসেম্বর কোন বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন। পরদিন ১০ই ডিসেম্বর ভোর ৪টায় তারা মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই তারা মংলায় পৌছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। এমন সময় তাদের অনেক উপরে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের উপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের উপর গুলি ও ও বোমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রান চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহুর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনক্রমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে পাড়ে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। পরে তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি|
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬, যশোর জেলার অর্ন্তঃগত নড়াইল মহকুমার মহিষখোলা গ্রামে। পিতা আমানত শেখ ছিলেন কৃষক এবং মাতা জেন্নাতুন নেসা ছিলেন গৃহিণী। শৈশবেই বাবা-মা হারিয়ে অনেকটা সংসার বিরাগী জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। সংসারের প্রতি মন ফিরিয়ে আনতে অবিভাবকরা তাকে ১৯৫২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করান। স্ত্রী তোতা বিবির বয়স তখন ১২ বছর। ১৯৫৪ সালের শেষভাগে জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান হাসিনা খাতুন। সংসারে অভাবের ছোঁয়া লাগায় দিশেহারা হয়ে যোগ দেন মুজাহিদ বাহিনীতে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯, তদানিন্তন ইপিআর-এ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। তার ই পি আর ক্রমিক নম্বর ছিল ৯৪৫৯। ১৫ ই নভেম্বর ১৯৬৪, জন্মগ্রহণ করে তার দ্বিতীয় সন্তান শেখ মোঃ গোলাম মোস্তফা কামাল। কিছুদিন পরেই আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধে বিয়ে করেন মৃত শ্যালকের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন। যুদ্ধ শেষে তিনি 'তকমা-ই-জং' ও 'সিতারা-ই-হারব' মেডেল লাভ করেন। মার্চ ১৯৭১এ তিনি ছুটি ভোগরত ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার খবর পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গায় ইপিআর-এর ৪নং উইং এ নিজ কোম্পানির সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সেক্টর গঠন হলে তাদের উপর ন্যস্ত হয় ৮নং সেক্টরের দায়িত্ব। তিনি নিয়োগ পান বয়রা সাব-সেক্টরে। এই সাব-সেক্টরের অধীনে গোয়ালহাটি, ছুটিপুর ঘাট, ছুটিপুর সেনাক্যাম্প, বরনী আক্রমণে অংশ নেন এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বরনীতে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার জীবন রক্ষা করেন। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১, সুতিপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের সামনে ষ্ট্যান্ডিং পেট্রোলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন প্রায় একাই। আহত অবস্থায় অধীনস্থ সৈনিকদের নিরাপদে পিছনে পাঠিয়ে দেন এবং শত্রুর মোকাবেলা অব্যাহত রাখার সময় শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র কাশীপুরে সমাহিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জন্ম ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩, ঝিনাইদহ জেলা শহরের অদুরে কালিগঞ্জের খদ্দখালিশপুর গ্রামে। পিতা আক্কাস আলী মন্ডল ছিলেন ভূমিহীন কৃষক এবং মা কায়েদুননেসা ছিলেন গৃহিণী। সবার পরামর্শে বাবা তাকে ভর্তি করিয়ে দেন গ্রামের পাঠশালায়। দারিদ্রের কষাঘাতের মধ্যেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ৫ম শ্রেণী পাশ করে ভর্তি হলেন স্থানীয় নৈশ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে। কিন্তু এবার তাকে হার মানতে হলো দারিদ্রের কাছে, পড়াশোনা ছেড়ে লেগে গেলেন বাবাকে সাহায্যের কাজে। সততা, কঠোর পরিশ্রম ও কাজের প্রতি আন্তরিকতার কারণে অল্প দিনেই অর্জন করলেন সবার আস্থা। ১৯৭০ সালে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। কর্মস্থলের আশেপাশে প্রশিক্ষণরত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্যদের চৌকসতা ও সুশৃঙ্খলতা মুগ্ধ করে তাকে। ১৯৭১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে। প্রশিক্ষণের জন্য গমন করেন চট্টগ্রাম ইবিআরসিতে। ২৫শে মার্চ বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের সেনারা হামলা চালায় সেখানে। তার চোখের সামনেই হত্যা করে অসহায় ২৫০০ রিক্রুট এবং অন্যান্য বাঙালী সৈনিকদের বেশিরভাগকে। সেখান থেকে পালিয়ে পায়ে হৈটে গমন করেন নিজ গ্রামে। মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে যোগ দেন যশোরের কাছে অবস্থানরত ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে। সিপাহী হিসেবে রেজিমেন্ট থেকে তার সৈনিক নাম্বার দেওয়া হয় ৩৯৪৩০১৪। নিযুক্ত হন রান্নার কাজে। কিন্তু সম্মুখ যুদ্ধের প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে তাকে লেঃ কাইয়ুমের রানার হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেবার সুযোগ দেওয়া হয়। বীরত্ব প্রদর্শন করেন কোদালকাঠি পাকিস্তানী অবস্থান আক্রমণে। ২৮শে অক্টোবর ১৯৭১, ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধলই আক্রমণে সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার্থে শত্রুর বাঙ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে শত্রুর মেশিনগান বাস্টের আঘাতে শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আম্বাসার হাতিমারাছড়া গ্রামে দাফন করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে। শাহাদাতের ৩৬ বছর পর ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তার দেহাবশেষ স্থানান্তর করে রাষ্ট্রীয় সম্মানে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে পুনঃ সমাহিত করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ৭ মার্চ ১৯৪৯, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে। পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন কৃষক ও শৌখিন গাইয়ে এবং মা সাফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। পিতার আর্থিক দৈন্যতার কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে মামার বাড়ি মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে গমন করেন। ১৯৫৩ সালে পাতারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেনের জীবনীগ্রন্থ, ক্ষুদীরামের ফাঁসী, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী সহ বহু গ্রন্থ তিনি নিয়মিত পড়তেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৩রা অক্টোবর ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালের ২রা জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তার নম্বর ছিল PSS-১০৪৩৯। তিনি মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, রিসালপুর থেকে অফিসার বেসিক কোর্স-২৯ এবং ইনফেন্ট্রি স্কুল অব ট্যাকটিস থেকে অফিসার উইপন কোর্স সম্পন্ন করেন। সর্বশেষ ১৯৬৯ সালে আগস্ট মাসের শেষের দিকে এক মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছিলো তখন তিনি কারাকোরামে কর্মরত ছিলেন। গণহত্যার সংবাদ পেয়ে ৩ জুলাই আরো তিনজন বাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ও ক্যাপ্টেন আনামের সাথে শিয়ালকোটের নিকটবর্তী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তার পোস্টিং হয় ৭নং সেক্টর-এর মহোদিপুর সাব-সেক্টরে। এখানে তিনি অসামান্য বীরত্বের সাথে আরগরারহাট, কানসাট, শাহপুর এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং মুক্তাঞ্চল গঠন করেন। এই ত্যাগী যোদ্ধা বেতন থেকে ২০টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা শরণার্থীদের সাহায্যার্থে দান করতেন। যুদ্ধকালীন তিনি গুরুতর আহত হন এবং পুরোপুরি সুস্থ্য হবার আগেই পুনরায় যুদ্ধে অংশ নেন। ১২ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তার নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আক্রমণ করে। যুদ্ধে অপরিসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে ১৪ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানী বাহিনীর স্নাইপার বুলেটের আঘাতে তিনি শহীদ হন। পরদিন সহযোদ্ধারা লাশ উদ্ধার করে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোনামসজিদ চত্বরে সমাহিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল
মোহাম্মদ মোস্তফার জন্ম ১৯৪৯
সালে বরিশালের দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামে। বাবার নাম
হাবিলদার হাফিজ। বাসার সামনে
দিয়ে সৈন্যদের সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ দেখে কিশোর
মোস্তফার মনেও সাধ
জাগতো সেনা সদস্য
হবার। পারিবারিক বাধার কারণে
১৯৬৭ সালের ১৬ই
ডিসেম্বর বাড়ি থেকে
পালিয়ে গিয়ে দেন
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে
নিয়োগ করা হয়
৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লায়।
১৯৭০
সালে তিনি বিয়ে
করেন ১৬ বছরের
কিশোরী পেয়ারা বেগমকে। তিনি যখন
মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন তখন
পেয়ারা বেগম ছিলেন
অন্তঃস্বত্ত্বা। মোহাম্মদ মোস্তফা স্ত্রীকে বলেছিলেন তার অনুপস্থিতিতে যদি
ছেলে হয় নাম
'বাচ্চ'ু আর
মেয়ে হলে নাম
'টুনি' রাখতে।
১৯৭১
সালের উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ৪ ইষ্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অভ্যন্তরীণ গোলোযোগ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সিলেট ও
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন করে। ভালো
বক্সার হিসাবে রেজিমেন্টে তার সুনাম
ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে বক্সার হিসাবে সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসাবে পদোন্নতি পান। পাকিস্তানি চক্রান্ত বুঝতে পেরে
কয়েক জন বাঙ্গালি সৈনিককে সাথে নিয়ে
মেজর শাফায়াত জামিল অধিনায়ক লে. কর্নেল খিজির হায়াত
খান সহ সকল
পাকিস্তানি অফিসার ও সেনাদের গ্রেফতার করেন। এরপর
তারা মেজর খালেদ
মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে
প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।
১৪
এপ্রিল পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার গানশীপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬
বিমান যোগে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনীর ৪
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর। গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন
কমান্ডার ছিলেন মোহাম্মদ মোস্তফা। পাকিস্তানি আক্রমণে প্লাটুনটির সমস্ত রেশন
ধ্বংস হয়ে যায়।
নতুন করে কোন
রেশন না পাওয়ায় সবাই দীর্ঘ সময়
ধরে অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। এমন অবস্থায় মোহাম্মদ মোস্তফা তার এল.
এম. জি. সাথে
নিয়ে আখাওড়া রেল ষ্টেশনে মেজর শাফায়াত জামিলকে রেশনের অনুরোধ করেন। মেজর
শাফায়াত জামিল তাদেরকে অনতিবিলম্বে প্রতিরক্ষা অবস্থানে যেতে নির্দেশ দেন এবং সেখানে রেশনের বন্দোবস্ত করেন।
১৭
এপ্রিল সকাল থেকে
পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের উপরে। এমন
সময় বৃষ্টিও শুরু হয়।
প্রচন্ড আক্রমণের খবর পেয়ে
মেজর শাফায়াত হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুন পাঠান অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে। সারাদিন যুদ্ধ চলে।
১৮ এপ্রিল সকালে বর্ষণমুখর পরিস্থিতিতে শত্রু দরুইল
গ্রামের কাছে পৌছে
যায়। মূল আক্রমণ আরম্ভ হয় দুপুর
১২ টায় অবস্থানের পশ্চিম দিক থেকে।
শত্রুর একটি দল
প্রতিরক্ষার পিছন দিক
দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলছিলো। মুক্তিবাহিনী দরুইল গ্রাম
থেকে আখাওড়া রেল ষ্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে
সরে আসতে হলে
তাদের প্রয়োজন ছিলো নিরবিচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোহাম্মদ মোস্তফা সহযোদ্ধাদের জানান তিনি
নিজে এই কাভারিং ফায়ার প্রদান করবেন এবং
সবাইকে পেছনে হটতে
নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যের টানে মোস্তফা ছিলেন অবিচল। তিনি সহযোদ্ধাদের বললেন তার প্রাণের তুলনায় সহযোদ্ধাদের অনেকের প্রাণের মূল্য অধিক।
মোস্তফার ক্রমাগত নিখুঁত ফায়ারে পাকিস্তানিদের প্রায় ২০-২৫ জন
হতাহত হন এবং
তাদের সম্মুখ গতি মন্থর
হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া
হয়ে মোস্তফার অবস্থানের উপরে মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে মোস্তফার এল.এম.জি.-র
গুলি নিঃশেষ হয় এবং
তিনি মারত্মক ভাবে জখম
হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা ট্রেঞ্চে এসে তাকে
বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
মোস্তফা তার জীবন দিয়ে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। দরুইল গ্রামের আপমর জনগণ অতি সম্মান ও আন্তরিকতার সাথে তাকে শাহাদাতের স্থানের পাশেই সমাহিত করেন। অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব 'বীরশ্রেষ্ঠ' প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্ম ২৯শে অক্টোবর ১৯৪১, ঢাকার পৈত্রিক নিবাসে। পিতা মৌলভী
আব্দুস সামাদ ছিলেন
সরকারী চাকুরে এবং মা
মোবারকুন্নেসা ছিলেন গৃহিণী। নয় ভাই ও
দুই বোনের মধ্যে
মতিউর ছিলেন অষ্টম। ১৯৫২ সালে মতিউরকে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।
সাধারন কিন্তু রুচি সম্মত
জীবন যাপন অল্প
কিছুদিনের মধ্যেই সবার থেকে
আলাদা করে উপস্থাপন করে মতিউরকে। ১৯৫৬ সালে
ভর্তি হন পাকিস্তান বিমান বাহিনী স্কুল, সারগোদায়। ১৯৬০ সালে সেখান
থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করে।
১৯৬১ সালের ১৫আগস্ট ৩৬তম জিডি (পি)
কোর্সে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করেন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমি, রিসালপুরে। একাডেমিক বিষয়ে এবং
খেলাধূলাতে মতির দক্ষতার ছিলো উল্লেখ করার মতো।
১৯৬৩ সালের ২৩
জুন তিনি ফ্লাইট ব্রাঞ্চে কমিশন লাভ
করেন। তার সার্ভিস নাম্বার দেওয়া হয়,
পিএকে-৪৩৬৭। বিমান
বাহিনীতে তিনি ২
নং ট্রেনিং স্কোয়াড্রন-মৌরিপুর, ফাইটার লিডারশীপ স্কুল-করাচী
এবং ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর স্কুল-এ
সফল ভাবে প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেন। চাকুরী জীবনে তিনি এফ-৮৬ জঙ্গী
বিমানের পাইলট হিসাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ১৯নং
ফাইটার স্কোয়াড্রন ও ২৫
নং স্কোয়াড্রনে। প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
বিমান বাহিনী একাডেমি, রিসালপুরে ও ২
নং স্কোয়াড্রনে। এছাড়া তিনি
কিছুকাল অন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সদর দফতর,
ইসলামাবাদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে এক
পাঞ্জাবী পাইলটের সাথে প্রশিক্ষন কামান আকাশ যুদ্ধে লিপ্ত হলে দূর্ভাগ্যজনকভাবে তার
বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
তিনি বেইল আউট
করেন। এতে তাদের
উভয়কেই কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হয়।
বিচারে পাঞ্জাবী পাইলটের শাস্তি না হলেও
তাকে এক বছরের
জন্য গ্রাউন্ডেড করা হয়।
১৯৬৮ সালের ১৯শে
এপ্রিল তিনি মিলি
খানের সাথে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৬৯সালের ২৩ এপ্রিল তাদের প্রথম কন্যা
সন্তান মাহিন ও
১৯৭০ সালের ১৪ই
ডিসেম্বর দ্বিতীয় কন্যা সন্তান তুহিনের জন্ম হয়।
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বাৎসরিক ছুটিতে তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। এসময়
তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাধীকার আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে
পড়েন। ১লা মার্চ
কর্মস্থলে ফিরে যাবার
কথা থাকলেও তিনি তা
করেননি। ২৫শে মার্চ
গ্রামের বাড়ি নরসিংদী গমন করেন এবং
সেখানকার স্বাধীনতাকামী জনতার প্রশিক্ষনের বন্দোবস্ত করেন। ৪ঠা
এপ্রিল পাকিস্তান বিমান বাহিনী নরসিংদীর উপর বিমান
হামলা চালালে তিনি ভৈরব
হয়ে নানার বাড়ি
গোকুল নগরে গমন
করেন। পাকিস্তান থেকে বিমান
সংগ্রহের মানসে ৯ই
মে ১৯৭১, তিনি
সপরিবারে কর্মস্থলে ফিরে যান।
কর্তৃপক্ষের কাছে দেরিতে যোগদানের কারন দর্শানোর পর তাকে ফ্লাইং সেফটি অফিসারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
নিয়মিত কাজের আড়ালে
তিনি একটি বিমান
ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করতে থাকেন। এনিয়ে তিনি কয়েকজন দেশপ্রেমিক বাঙালি অফিসারের সাথে আলোচনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২০শে আগস্ট
১৯৭১ সকাল ১১.১৫ মিনিটে পাঞ্জাবী পাইলট অফিসার রাশেদ মিনহাজসহ টি-৩৩
প্রশিক্ষণ বিমান (কল
সাইন ব্লু-বার্ড-১৬৬) ছিনতাই করে ভারত অভিমূখে উড্ডয়ন করেন। অপর
পাইলটের সাথে কন্ট্রোল নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সিন্ধুর বেদিনে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে উভয়েই
শাহাদত বরণ করেন।
পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার লাশ
উদ্ধার করে মশরুর
বিমান ঘাটির ৪র্থ
শ্রেণীর কবরস্তানে অত্যন্ত অমর্যাদার সাথে দাফন
করে। বাংলাদেশ সরকার তাকে
'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে।
শাহাদতের ৩৫ বছর
পর ২৪শে জুন
২০০৬ মতিউরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে
এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবর স্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।
(মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহকৃত)