সন্তানদের বয়ঃসন্ধিকাল মানে তাদের বালেগ হওয়ার মুহূর্ত। এর অবস্থা
সম্পর্কে কমবেশি আমাদের কিছু না কিছু জানা আছে। এ সময় একটা দুরন্তপনা কাজ করে বা
ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা এ সন্ধিক্ষণে খুব কম থাকে। এগুলোর কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও
আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু শারীরিক পরিবর্তনের কারণেই
বয়ঃসন্ধির সময় মানসিক পরিবর্তন হয়ে থাকে।
শারীরিক পরিবর্তনে যদিও বয়ঃসন্ধি শুরুর সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য
রয়েছে, তবে গড়পড়তা মেয়েদের এই প্রক্রিয়া ছেলেদের 1-2 বছর আগে শুরু হয়। যেমন,
মেয়েদের 9-14 বছর এবং ছেলেদের 10-17 বছর। আর অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত
হয়।
সাধারনত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা
দেয়ার চার বছরের মধ্যেই মেয়েরা তাদের উচ্চতা ও প্রজনন পরিপূর্ণতা লাভ করে।
এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ছেলেদের বৃদ্ধি হয় দ্রুত। যদিও বয়:সন্ধির শুরুর সময় দেহের
পরিবর্তন বংশানুক্রমিক কারণেও পরিবর্তিত হতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকাল চলার সময় ছেলেমেয়েদের খাবারের দিকে অভিভাবকগণের বিশেষ খেয়াল
রাখতে হবে। এটা তাদের শারীরিক সক্ষমতা লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই সময়
তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার যেমন-ডিম, দুধ, গোশত, সবজি, ফল, ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
তাদের নিয়মতান্ত্রিক চলাফেরা, খেলাধুলা, ঘুম আর খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।
দরকার প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ সময় বাবা-মা, বড় ভাই বোন
এবং বাড়ীর মুরব্বীগণের বাড়তি মনোযোগ ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান
প্রয়োজন।
যেহেতু বয়সের সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে, তাই এ সময় মানসিক পরিবর্তনও এসে যায়। যেমন- খুব চঞ্চল কিংবা একদম চুপচাপ, খিটখিটে মেজাজ, নতুন কিছু জানার আগ্রহ, কেউ কেউ খুব বাধ্যগত থাকে।
এ সময় অভিভাবকগণের সন্তানদের
প্রতি কিছু বাড়তি খেয়াল রাখার প্রয়োজন যেমন- বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেমেয়েরা খারাপ
জিনিসের প্রতি সহজেই প্রলুব্ধ হতে পারে বলে সন্তানকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে
বাবা-মায়ের প্রচুর সময় দেয়া উচিত। বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সেই দায়ীত্ব
আরো বেড়ে যাচ্ছে। মোবাইল, কম্পিউটার প্রভৃতির অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার রোধ করতে হবে।
অপরদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক বিভিন্ন
ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ব্লগ প্রভৃতি সন্তানরা কে কিভাবে ব্যবহার করছে, সেদিকে বিশেষ
নজর দিয়ে তাদেরকে সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাতে তারা না বুঝে কোন নৈতিক অবক্ষয়ে
জড়িয়ে জীবনকে নষ্ট না করে।
অবসর বা ছুটির দিনে মনের
প্রফুল্লতার জন্য তাদেরকে শিক্ষামূলক বিভিন্ন স্পটে ঘুরিয়ে আনতে পারেন। আবার তাদের
যেন অবসর সময় ভালভাবে কাটে-এ জন্য তাদের শিক্ষণীয় বইপুস্তক, বিভিন্ন ধরনের
শিক্ষামূলক গল্পের বই প্রভৃতি পড়ার অভ্যাস করাতে পারেন। তবে কখনো তারা আপত্তিকর
কোন বই-পুস্তক যাতে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেমেয়েরা জীবনকে নতুনভাবে বুঝতে শিখে। কিন্তু তখন তারা
জীবনের অষ্কুরে থাকায় ভালমন্দ না বুঝে অনাকাঙ্খিত কোন বিষয়ে জড়িয়ে যেতে পারে-যা
তাদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলতে পারে। এ জন্য যাতে সেরকম কোন অবস্থার সৃষ্টি না
হয় এবং তারা নাজায়িয প্রেম-ভালবাসার রঙ্নি ফাঁদ থেকে দূরে থেকে নিজেদের জীবনকে
রক্ষা করতে পারে-সে জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বুঝ দেয়া অভিভাবকের কর্তব্য।
বয়সন্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা বালেগ বয়সে
পৌঁছে যায় বিধায় তখন থেকে তাদের ওপর নামায-রোযাসহ শরীয়তের সকল হুকুম ফরজ হিসেবে
বর্তিত হয়। তাই শরীয়তের এ সকল হুকুম পালনে তাদের তৎপর হতে হবে। আর সেই সকল গুনাহ
থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে বালেগ হওয়ার পর মেয়েদের ওপর পর্দা পালন
অপরিহার্য হয়ে যায়। সে জন্য মেয়েরা যাতে কোন ছেলেদের সংশ্রবে না যায় এবং পুরুষদের
দৃষ্টি ও সংশ্রব থেকে নিজেদেরকে হিফাজত করতে পারে-সেই দিক-নির্দেশনা তাদেরকে দিতে
হবে।
এক্ষেত্রে স্মাতব্য যে, অনেক মেয়ে অবুঝ থাকার কারণে মাহরাম পুরুষ যেমন
পিতা বা ভাই প্রমুখের সাথে গা ঘেষে চলে বা তাকে স্বাভাবিক মনে করে। অথচ তা বালেগা
মেয়েদের জন্য জায়িয নয়। তাছাড়া তা অনেক সময় নানা ফিতনারও কারণ হতে পারে। তাই
তাদেরকে এ ব্যাপারে সঠিক বুঝ দিতে হবে। সেই সাথে খালাতো ভাই, চাচাতো ভাই, মামাতো
ভাই, দুলাভাই, খালু, বেয়াই প্রমুখ বিশেষ আত্মীয় গাইরে মাহরামদের থেকে তাদের দূরে
রাখার এবং পুরোপরি পর্দার সাথে চলার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে-সামান্য
অবহেলার কারণেও এক্ষেত্রে বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই এ ব্যাপারে কড়া দৃষ্টি রাখা
প্রয়োজন।
পরিশেষে মনে রাখবেন, এ
সময় সন্তানদের মধ্যে যে শিক্ষা এবং নীতির বীজ বুনবেন, সে রকম ফলই ভবিষ্যতে আপনার
সন্তানদের কাছ থেকে পাবেন। তাই তাদেরকে এ সময় থেকে পরিপূর্ণ দ্বীনদাররূপ গড়ে তুলতে
সচেষ্ট হতে হবে।