মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

ঘুমের তাৎপর্য ও সুন্নাত তরীকা




আল্লাহ পাক এই পৃথিবীতে দৃশ্য-অদৃশ্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবই আশরাফুল মাখলুকাত। মানবজাতির কল্যাণে নিয়োজিত। মাছ যেমন পানির মধ্যে ডুবে থাকে, তেমনি আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে নিমজ্জিত আছি।

পার্থিব জীবনের সময়কে আমরা প্রধানত: দু’টি ভাগে বিভক্ত করতে- দিন ও রাত্রি। আর রাত ও দিবস মহান প্রতিপালকের মহিমা ও একত্ববাদের নিদর্শনাবলীর অন্তর্গত। (আল-কুরআন- 41:31, প্রথমাংশ দ্রষ্টব্য)
দিবস ও রাত্রির কার্যাবলী মহান প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা বান্দার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। দিবসে মানুষ কর্মব্যস্ত থাকে। নানা কর্মকান্ডের মানুষের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আল্লাহ পাক মানব জাতির বিশ্রামের জন্যে রাতকে সৃষ্টি করেছেন। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- “আল্লাহ (সেই সত্তা) যিনি তোমাদের জন্যে রাত্রি সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার।” (আল-কুরআন 40:61 প্রথমাংশ)
মানব জীবনে বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশ্রামে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, নবউদ্যমে কর্মে মনোযোগ আকৃষ্ট হয় এবং তা সহজভাবে কর্ম সম্পাদনে সহায়তা করে। সুতরাং কাজের সাথে বিশ্রামের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জনৈক কবি বলেছেন- “বিশ্রাম কাজেরই অংশ এক সূত্রে গাঁথা, নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা।”
বিশ্রামের অধিকাংশ সময় আমরা নিদ্রায় অতিবাহিত করে থাকি। প্রত্যেকেই গড়পরতা প্রতিদিন অর্থা 24 ঘন্টায় 6 হতে 8 ঘন্টা নিদ্রা যাই। বিশ্রামের ক্ষেত্রে মানব জীবনে নিদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম।
নিদ্রা মৌলিক ইবাদাত নয়। তবে সুন্নাত তরীকায় শয়ন করে ঘুমালে, নিদ্রাও ফজীলত হিসেবে ইবাদত গণ্য হবে। রাসূলে কারীম (সা:) ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে নিয়মিতভাবে উজু করে নিতেন। রাসূলে পাক (সা:) ইরশাদ করেন- “বান্দা যখন উজুর সহিত আল্লাহর যিকির করতে করতে নিদ্রামগ্ন হয়, তখন তাকে নামাযের অবস্থায় আছে বলে লিখা হয়।”
হযরত আয়িশা (রা:) বলেন- যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) নিদ্রা যেতেন, তিনি ডান হাতের উপর মাথা রাখতেন। কা’ব আহবার (রহ:) বলেন, যখন নিদ্রা যাও, ডানপাশে ফিরে নিদ্রা যাবে এবং তোমার মুখকে কিবলামূখী রাখবে। কেননা, এ অবস্থায়ই মৃতকে কবরে রাখা হয়।
নিদ্রাকে মৃত্যুর ভ্রাতা বলা হয়। তাই নিদ্রা হতে গাত্রোত্থান এক প্রকার পুনরুত্থান। কেননা, নিদ্রাকালীন বিলুপ্ত চেতনা পুনরায় ফিরে না আসা বিচিত্র কিছু নয়। তখন আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলে রূহকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, আবার না-ও দিতে পারে-এরূপ ধারণা পোষণ করা উচিত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-“আল্লাহ আত্মাসমূহকে কব্য করে থাকেন তাদের মৃত্যুকালে। আর সেই আত্মাসমূহকেও যাদের মৃত্যুকাল আসেনি- তাদের নিদ্রিত অবস্থায়। অনন্তর সেই আত্মাসমূহকে (দেহে ফিরে আসা হতে) নিবৃত্ত রাখেন- যাদের প্রতি মৃত্যুর আদেশ হয়, আর অবশিষ্ট আত্মাগুলোকে অবকাশ দেন এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে।” (আল-কুরআন, 39:42)

> লিখক- মোঃ আবদুল মোতালেব
> সম্পাদনায়- R.Hossain