সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

কুরবানীর ঐতিহাসিক ঘটনা ও কুরবানী দেয়া কাদের উপর ওয়াজিব..


কুরবানী আল্লাহ তাআলার একটি বিধানআদম আলাইহিস সালাম হতে প্রত্যেক নবীর যুগে কুরবানী করার ব্যবস্থা ছিলযেহেতু প্রত্যেক নবীর যুগে এর বিধান ছিল সেহেতু এর গুরুত্ব অত্যধিক


যেমন ইরশাদ হয়েছে- আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে কুরবানী শব্দের অর্থ উৎসর্গ ও নৈকট্য অর্জনকিন্তু শরীয়তের পরিভাষায় জিলহজ্ব চাঁদের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট জন্তুকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জবেহ করে উৎসর্গ করার নাম কুরবানী এটি ইসলাম ধর্মের অতি মূল্যবান ইবাদতযদিও বিত্তবানদের উপর এটা আদায় করা ওয়াজিব কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তিও ইচ্ছা করলে কুরবানী আদায় করে ছওয়াব অর্জন করতে পারে

হযরত নবী করীম (সা.) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি কুরবানী আদায় করতে সক্ষম অথচ তা আদায় করে না, সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটে না আসেতোমরা মোটা ও তাজা জন্তুর দ্বারা কুরবানী কর, কারণ উহা পোলছেরাতে তোমাদের সাওয়ারী হবে কুরবানীকারী কুরবানী জন্তুর প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকী পায় ১০ই জিলহজ্ব তারিখে মুসলমান যত প্রকার নেক কাজ করে তন্মধ্যে আল্লাহ্র নিকট কুরবানী থেকে প্রিয় আর কোন ইবাদত নেই কুরবানীকৃত জন্তু কেয়ামতের দিন নিজের শিং, লোম ও খুরসহ ছহি সালামতে আল্লাহ্র দরবারে হাজির হবে এবং রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহ্র দরবারে মকবুল হয়ে যায় আল্লাহ্র ইবাদতের জন্য জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের চেয়ে তার নিকট প্রিয়তর দিন আর নেইএই দশকের একদিনের রোজা এক বছরের রোজার এবং এক রাত্রির ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য

সুতরাং বুঝা যায়, জিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে একটি জন্তু জবেহ করে যে ছওয়াব পাওয়া যায় অন্য সময় পঞ্চাশটি জন্তু জবেহ করলেও সে রকম ছওয়াব পাওয়া যায় নাএ জন্য হযরত মুহাম্মদ (সা.) এক বছর একশত উট দ্বারা কুরবানী করেছিলেন অতএব, মুসলমানগণকে এরূপ নেক কাজে উৎসাহী হওয়া উচিততবে মনে রাখতে হবে নিয়ত ঠিক হওয়া চাইসুনাম, রিয়া (লোক দেখানো) ও বদনামের ভয়ের জন্য কুরবানী দেয়া হলে ছওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। বাড়ি, ভিটা, কর্জ, সদা-সর্বদা ব্যবহারের দরকারী পশু, কাপড় ও জিনিসপত্র এবং বাৎসরিক খোরাকী পরিমাণ জমি বা অন্য প্রকারের সম্পত্তি বাদ দিয়ে যার নিকট ৫২ তোলা চাঁদি (রূপা) বা ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা ৫২ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ নগদ টাকা এবং নেছাব পরিমাণ অন্যান্য সম্পত্তি থাকবে শরীয়ত মতে সেই ধনীঅর্থাৎ তার উপর কুরবানী ওয়াজিব এবং সদকা ও ফেতরা সে গ্রহণ করতে পারবে না, গ্রহণ করলে তা হারাম বলে গণ্য হবে স্ত্রী ও বালেগ পুত্র, বালেগা কন্যা ধনী হলে তাদের নিজ থেকেই কুরবানী করা ওয়াজিবকিন্তু নাবালেগ পুত্র, নাবালেগা কন্যা ধনী হলেও কুরবানী করা ওয়াজিব নহেআর যদি কাবিনের ওয়াদা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার অনুমতিক্রমে কুরবানী আদায় করে তবে স্ত্রীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে
জিলহজ্ব চাঁদের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই কুরবানী আদায় করতে হবেঅস্ত গেলে আদায় হবে না তবে ১০ তারিখ করা উত্তম কুরবানী ঈদে সশব্দে এবং ঈদুল ফিতরে মনে মনে উপরোল্লিখিত তকবিরে তাশরিক বলতে বলতে এক রাস্তায় যাওয়া (ঈদের জামাতের ময়দানে) অপর রাস্তায় আসা, ঐ দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা, সাধ্যমত উত্তম কাপড় পরিধান করা ও সুগন্ধি লাগান সুন্নত জুমা ও দুঈদের খোতবা পাঠকালে মনোযোগ সহকারে শোনা ওয়াজিবখোতবা পাঠকালে কথা বলা, হাঁটা-হাঁটি করা, চাঁদা উঠানো বা অমনোযোগী হওয়া গুনাহ
ঈদের নামাজ ১০ই জিলহজ্ব পড়লে তার পূর্বে কুরবানী জায়েজ নেইকিন্তু কারণবশতঃ ১১ বা ১২ তারিখ পড়লে আগেও জায়েজ আছে
কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি ১২ই জিলহজ্বের সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে বিশেষ অর্থ প্রাপ্তির বা অন্য কোন উপায়ে (অবশ্যই হালাল উপায়ে) ধনী হয়ে যায় কিংবা ধনী যদি মুসাফিরী থেকে বাড়ি ফিরে বা ১৫ দিন নিজ বাড়ি থেকে ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশী দূরে সফরের নিয়ত করে অর্থাৎ থাকার নিয়ত করে তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়কিন্তু ঐ সময়সীমার মধ্যে কোন ব্যক্তি ধনী থেকে দরিদ্র হয়ে যায়, অথচ কুরবানী করেনি তবে তার উপর কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব নহে

ধনী বা দরিদ্র কুরবানীর নিয়তে ক্রয়কৃত জন্তুকে শেষ তারিখ অর্থাৎ জিলহজ্বের ১২ তারিখ পর্যন্ত জবেহ না করলে উহা জীবন্ত ছদকা করতে হবেঅথবা কেহ ঐ জন্তু জবেহ করলে উহার সমুদয় গোশ্ত ছদকা করে দিতে হবে এবং নিজে খেতে পারবে নাতদ্রূপভাবে মান্নতী কুরবানীরও একই হুকুম

কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি কুরবানীর নিয়তে কোন জন্তু ক্রয় করে, উক্ত ক্রয়কৃত জন্তুটি মরে যায় বা হারানো যায় বা এমন দোষযুক্ত হয়ে যে তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না তবুও ঐ জন্তুটি যদি ১২ই জিলহজ্বের সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে পাওয়া যায় দরিদ্র ব্যক্তি অপর একটি জন্তু কুরবানী দিলেও প্রাপ্ত জন্তুটি জবেহ করতে হবে এবং ১২ই জিলহজ্বের পরে পাওয়া গেলে সদকা করবে কিন্তু ধনী ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপর একটি জন্তু জবেহ করে থাকলে প্রাপ্ত জন্তুটি জবেহ বা সদকা করার প্রয়োজন হবে না দোয়া পড়তে না জানলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’’ বলে জবেহ করলে হালাল হয়ে যাবেঅবশ্য জানা থাকলে দোয়া পড়া ভালনা পড়লে কোন ক্ষতি নেই
কুরবানীর জন্তু জবেহ করার সময় শরিকদারগণ তথায় উপস্থিত থাকা বা তাদের প্রকাশ করে জবেহ করলেও দোষ নেইদরিদ্র ব্যক্তির উপর আল্লাহ তায়ালা কুরবানী ওয়াজিব করেননিকিন্তু সে যখন নিজ থেকে কুরবানী দিতে জন্তু ক্রয় করে তখন যদি সে তা আদায় না করে তাহলে আল্লাহ্র সমীপে ঠাট্টা করার শামিল
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা একজনের কুরবানী আদায় করা যায় গরু, মহিষ ও উট দ্বারা সাতজনের কুরবানী আদায় করা যায় উল্লেখিত জন্তু ছাড়া অন্য কোন জন্তু যেমন হরিণ, খরগোশ, গয়াল, বন্য ছাগল ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেইউট ৫ বছরের, গরু ও মহিষ ২ বছরের এবং দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল ১ বছরের কম হলে কুরবানী হবে নাতবে ৬ মাস বয়সের কোন দুম্বাকে দেখতে যদি ১ বছরের বয়সের মনে হয় তবে জায়েজ আছে
অংশীদারীদের কুরবানীর গোশ্ত ভাগ করার সময় ওজন করে ভাগ করতে হবেবিশেষ করে অছিয়ত ও মান্নতকারীর কুরবানী যোগ হলে সমান দুভাগে ভাগ করে অছিয়ত ও মান্নতকারীর ভাগ সদকা করতে হবে

যদি কোন জন্তুর এক চক্ষুর কিছু অংশ বা এক চক্ষু বা দুচক্ষু অন্ধ হয়, অথবা কান মোটেও নেই বা কিছু অংশ নেই তদ্রূপ লেজ কিছু অংশ নেই বা মোটেও নেই এরূপ জন্তুর দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ হবে না
যদি কোন জন্তু তিন পায়ের উপর চলে চতুর্থ পায়ের উপর মোটেও ভর দেয় না তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই, কিন্তু চতুর্থ পায়ের উপর সামান্য ভর দিলেই জায়েজ হবে যে জন্তুর দাঁত অধিকাংশ নেই বা মোটেও নেই কিন্তু ঘাস খেতে পারলেও নিঃসন্দেহে ঐ জন্তুর দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না তদ্রূপ শিং না থাকলেও জায়েজ হবে নাতবে শিং একটা ভাঙ্গা বা অর্ধ ভাঙ্গা হলে কিংবা নড়বড়ে হলেও কুরবানী জায়েজ হবে

ঐতিহাসিক পটভূমি:
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে অনেক পরীক্ষা করেছেনসকল পরীক্ষায় তিনি ধৈর্য্য ও সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেনএকরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহপাক তাকে ইঙ্গিত করেছেন তার সবচাইতে প্রিয় জিনিসটিকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করতেহযরত ইব্রাহীম (আ:) অনেক ভেবেচিন্তে দেখলেন একমাত্র পুত্র ইসমাঈল (আ:) এর চেয়ে তার কাছে প্রিয় আর কোনো কিছু নেইএমনকি নিজের জীবনের চাইতেও সে পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে বেশি ভালোবাসতেনতারপরও তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করার সিদ্ধান্ত নিলেনঅত:পর পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছিএখন তোমার অভিমত কি?” সে (হযরত ইসমাঈল (আঃ)) বলল, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুনআল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন” (সূরা সফফাত আয়াত-১০২)ছেলের সাহসিকতাপূর্ণ জবাব পেয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) অত্যন্ত খুশি হলেনমহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছেলের গলায় ছুরি চালালেনতখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত হতে একটা দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন তার মনে সংশয় ছিল পৃথিবীতে পদার্পণের পূর্বেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যবেহ কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলবেনতাই জিবরাইল (আঃ) আকাশ হতে উচ্চৈস্বরে ধ্বনি দিতে থাকেন আল্লাহু আকবারআওয়াজ শুনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবারপিতার মুখে তাওহীদের বাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিলহামদআল্লাহর প্রিয় দুই নবী এবং হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এতই পছন্দনীয় হলো যে, সেইদিন থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত এই কথাগুলো ৯ই জিলহজ্ব ফজর থেকে আসর পর্যন্ত বিশেষ করে ঈদুল আযহার দিনে বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে কোরবানী হয়ে গেল একটি বেহেস্তী দুম্বাকঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে ঘোষণা করেনঃ তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছআমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি নিশ্চয় এটা একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষাআমি তার (ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু” (সূরা সাফফাত আয়াত-১০৪-১০৭)বর্ণিত আছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উপরোক্ত গায়েবী আওয়াজ শুনে হযরত জিবরাইল (আঃ) কে একটি বেহেস্তী দুম্বাসহ দেখতে পানএ জান্নাতী দুম্বা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে দেয়া হলে তিনি আল্লাহর নির্দেশে পুত্রের পরিবর্তে সেটি কোরবানী করলেন আর তখন থেকেই শুরু হলো কোরবানীর মহান বিস্ময়কর ইতিহাসযা অন্ততকাল ধরে সুন্নতে ইব্রাহীম হিসেবে বিশ্বের সকল মুসলমানের কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে

কুরবানীর ফযীলত:
কুরবানীর পশুর শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী পাওয়া যায় কুরবানীর দিনে কুরবানীই হলো সবচেয়ে বড় এবাদাত আয়শা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নাইঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর,পশম সমূহ ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবেকুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পুর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদের নফস কে পবিত্র কর

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত:
জিলহজ্জ মাসের দশম তারিখে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়এই দিনে বিত্তবানেরা দরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়ায়, অসহায় দুস্থ লোকেরা এই দিনে বিত্তবানদের থেকে পায় বিশেষ সহনুভবতা, সব মিলে একে অপরের সুখ-দুখ, আনন্দ-ব্যদনা বুঝতে সক্ষম হয়, যার ফলে আল্লাহর কাছে এই মাসের ফজিলত অনেক বেশিইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল অন্য যে কোন দিনের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, জিহাদ ও নয় কি? বললেন জিহাদ ও নয়, তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স:) এর সাথে বের হয়েছে আর ফিরে আসে নিঅর্থাৎ শহিদ হয়ে গেছেবোখারী, ১/৩২৯, হাদিস ৯২৬ফতহুলবারী লিইবনে হাজার, ৩/৩৯০, হাদিস ৯১৬

কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব :

১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থ্যাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী কতরা ওয়াজিব মুসাফিরের উপর (সফর রত অবস্থায় থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব হয় না কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর চওয়াব পাওয়া যাবে কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়-সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু করুবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় কোন মকসুদের (উদ্দেশ্য) জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসুদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করলে কুরবানী দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর (ছাগল) মুল্য সদকা করা ওয়াজিব

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ :
বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাড়, বলদ, মহিষ, উট, এই কয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ

কুরবানীর পশুর বয়স প্রসঙ্গ :
বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবেবয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্ত এরুপ মোটা তাজা যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবেতবে বকরী কোন অবস্থা এক বৎসরের কম হলে চলবে না গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবেউট এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে

কুরবানীর পশুর স্বাস্থ্যগত প্রসঙ্গ :
কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম যে প্রাণী লেংড়া অর্থ্যাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে-এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এরুপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না যে পশুর একটিও দাঁত নেই তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয় যে পশুর কান জন্ম হতে নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়, তবে কান ছোট হলে অসুবিধা আছে
যে পশুর শিং মুল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়তবে শিং উঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরপু পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয় অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয় ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না-এরপু হলে সেটিই কুরবানী দেয়া দুরস্ত হবে গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজযদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবেতবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরুপ পশু কুরবানী দেয়া মাকরুহ


সম্পাদনায়- R.Hossain
সময়ের কন্ঠস্বর হতে সংগ্রহকৃত।